ঢাকা, শনিবার ২১, সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৫১:৫৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
প্রস্তাবনা আসা মাত্রই সংস্কার হবে না: রিজওয়ানা হাসান কম শুল্কে আমদানি হলেও হিলি বন্দরে কমেনি পেঁয়াজের দাম ৩ পার্বত্য জেলায় চলছে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ পার্বত্য অঞ্চল পরিদর্শনে ৩ উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত ১৪২৩, আহত ২২ হাজার রাঙ্গামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট জাতিসংঘে গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে ২১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে বাড়ছে চাপ

আপনি জানেন কি স্তন ক্যানসার কেন হয়? 

লাইফস্টাইল ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:১৬ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০২৩ বুধবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

নীরব এক ঘাতক ব্যাধি স্তন ক্যানসার। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি ধরা পড়লে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। নারীদের কাছে আতঙ্কের নাম স্তন ক্যানসার। পুরুষদের চেয়ে নারীদের এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। 

নারীরা তাদের গোপন অঙ্গের রোগগুলো সহজে কারও কাছে বলতে চান না। তাই স্তন ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ হাজারের বেশি নারী এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আর মারা যান আট হাজারের মতো। ৪০ বছরের পর নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

স্তন ক্যানসার কী?

স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে তখন সাধারণত স্তন ক্যানসার হয়। তখন এই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিন্ডে পরিণত হয়। এরপর রক্তনালী লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে এই টিউমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যানসার রোগের বিষয়ে আতঙ্কের কারণ। কারণ এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সাহায্য নিয়েও রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা বা দীর্ঘ জীবনকালের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। 

তবে আশার বিষয় হচ্ছে, স্তন ক্যানসার যদি ‘Early Stage’ বা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে যায় তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ পুরোপুরি শতভাগ নিরাময় সম্ভব। 


কেন স্তন ক্যানসারের হার বাড়ছে?

মূলত স্তন ক্যানসারের দুই ধরনের কারণ দেখা যায়। অপরিবর্তনযোগ্য কারণসমূহ এবং পরিবর্তনযোগ্য কারণসমূহ। জেনেটিক, বংশ এবং হরমোনের কারণে যদি স্তন ক্যানসার হয় তবে তা অপরিবর্তনযোগ্য ধরা হয়। কারণ এই বিষয়গুলো পরিবর্তন করা যায় না। অন্যদিকে, পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকিসমূহ বলতে এমন কারণগুলোকে বোঝানো হয় যা একটু সাবধান থাকলে এড়ানো সম্ভব। 

স্তন ক্যানসার কেন হয়? 

স্তর ক্যানসারের পেছনে অনেকগুলো কারণ দায়ী হতে পারে। কিছু সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে চলুন জানা যাক- 

বিয়ের বয়স

অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত বিয়ে না করা এবং ৩০ বছর বয়সের পর প্রথম সন্তানের মা হওয়া স্তন ক্যানসারে ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া সন্তান না নেওয়া নারীদেরও এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। 

বুকের দুধ পান না করানো 

অনেক নারী সন্তানকে বুকের দুধ পান করান না। নিয়মিত বুকের দুধ না খাওয়ানোর অভ্যাসের কারণে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। 

ভুল খাদ্যাভ্যাস 

স্তন ক্যানসারের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের সংযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া এবং খাদ্যতালিকায় শাক সবজি না রাখা স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও দীর্ঘসময় টিনজাত, প্রিজারভড, কৃত্রিম মিষ্টি ও রঙযুক্ত খাবার খাওয়া নারী ও পুরুষের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী।

ভুল ডিওডোরেন্ট 

অনেক নারীই ঘামের দুর্গন্ধ এড়াতে ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করেন। ডিওডোরেন্ট কেনার সময় খেয়াল রাখুন এতে কী কী উপাদান আছে। অ্যালুমিনিয়াম বেইজড উপাদান থাকলে তা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। 

অতিরিক্ত ওজন

ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া এবং একেবারেই শারীরিক পরিশ্রম না করা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

রাসায়নিক পদার্থ 

দীর্ঘদিন ধরে এয়ার ফ্রেশনার, কীটনাশক, অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত কসমেটিকস, ডিওডোরেন্ট এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে থাকলে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। 

ভুল সাইজের অন্তর্বাস/বক্ষবন্ধনী ব্যবহার 

স্তনের আকার অনুযায়ী সঠিক মাপের ব্রা বা বক্ষবন্ধনী ব্যবহার করা জরুরি। নয়তো স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে অনেকখানি। স্তনের আকারের চেয়ে বড় মাপের অন্তর্বাস পরলে তা স্তনের টিস্যুগুলোকে ঠিকমতো সাপোর্ট দিতে পারে না। আবার অতিরিক্ত টাইট ব্রা পরলে স্তনের তরলবাহী লসিকাগুলো কেটে যেতে পারে। 

সবসময় বক্ষবন্ধনী পরে থাকা

সারাক্ষণ ব্রা পরে থাকলে স্তন থেকে ঘাম নির্গত হতে অসুবিধা হয়। এতে বুকে আর্দ্রতা জমে। ফলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ঘরে থাকার সময়টুকুতে এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় ব্রা ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। 

এছাড়াও মদ্যপানের অভ্যাস স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এক্স-রে, সিটি স্ক্যানের সময় ব্যবহৃত রেডিয়েশনও রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। 

মাসিক শুরু-বন্ধের বয়স

নারীদের মাসিক শুরু এবং বন্ধের বয়সের ওপরেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যাদের ১২ বছর বয়সের পূর্বে মাসিক শুরু এবং ৫০ বছর বয়সের পর মাসিক বন্ধ হয় তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

বংশগত 

অনেকের ক্ষেত্রে বংশগত কারণে এই রোগ হতে পারে। পরিবারের মা, খালা, বোন বা মেয়ে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকাংশে।

জেনেটিক 

কিছু জেনেটিক কারণে মানুষ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। বিআরসিএ১, বিআরসিএ২ নামের জিনের মিউটেশন ৫ থেকে ১০ শতাংশ স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী থাকে।

হরমোন

স্তনের ক্যানসারের জন্য দায়ী হতে পারে হরমোনও। অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের সংস্পর্শে থাকেন, মাসিক বন্ধ হওয়ার পর যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করেন তাদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

স্তন বা ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে প্রতিটি মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি। আপনি নারী হলে নিজের খেয়াল রাখুন। সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো এড়িয়ে চলুন। পুরুষ হলে পরিবারের নারীদের শারীরিক সুরক্ষা নিশ্চিতে সচেতন থাকুন। 

তথ্যসূত্র- ক্যানসার কাউন্সিল, মায়ো ক্লিনিক